গ্রামের শান্ত মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে এক বৃদ্ধ। কাঁধে ফেলে রাখা মলিন গামছা, হাতে ধরা একটি দড়ি—আর সেই দড়ির অন্য প্রান্তে বাঁধা একটি বানর, যে তার সঙ্গীর পাশেই হেঁটে চলেছে। একটা সময় ছিল, যখন এই দৃশ্য মোটেও অপরিচিত ছিল না। ঝিকরগাছার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, হাটে-বাজারে হঠাৎ করেই এসে জুটত এমন এক "চিকিৎসক", যার প্রধান সহকারী ছিল তার শেখানো-পড়ানো বানরটি।
সেই বানর যাচাই করতো মানুষের রোগ। কারো কপালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বসে থাকত, আবার কারো পেটে হালকা চাপ দিত। এরপর বানরের মালিক গম্ভীরভাবে ঘোষণা করত রোগের নাম এবং ধরিয়ে দিত ঘরোয়া টোটকা কিংবা তাবিজ-কবজ। উৎসুক মানুষের ভিড় জমে উঠত। কেউ হাসিমুখে তামাশা দেখত, আবার কেউ সরল বিশ্বাসে সেই তাবিজ হাতে তুলে নিত। বিনিময়ে মিলত সামান্য কিছু অর্থ, হয়তো দশ-বিশ টাকা।
আসলে, পুরোটাই ছিল একটি নিপুণ অভিনয়, সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর এক পুরোনো কৌশল। বানরটি যা কিছু করত, তার প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং প্রশিক্ষিত। আর সেই বানরের মালিক? সে ছিল একাই একটি নাট্যদল, যে নিজের মতো করে মঞ্চস্থ করত প্রতারণার এই খেলা। তবুও, দিনের পর দিন এই পেশা টিকে ছিল বাংলার অজস্র গ্রামে। কারণ সেই সময়ে মানুষ ছিল সহজ বিশ্বাসী, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।
তবে সময় এখন অনেক বদলেছে। মানুষ আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত, সচেতন। তাই হারিয়ে গেছে সেই ভ্রাম্যমাণ "বানর চিকিৎসার" দল। পেশা বদলে ফেলেছে বেশিরভাগই।
সেই হারিয়ে যাওয়া দিনের গল্পের নীরব সাক্ষী যেন বন্দী হয়ে আছে সিয়াম ফারদিনের ক্যামেরায়। গদখালির বাবুপাড়া থেকে তোলা সেই ছবিতে দেখা যায় সেই সময়ের এক "চিকিৎসক"কে—আজকের নিস্তব্ধ, বিষণ্ণ এক মুখ, পাশে তার সঙ্গী সেই বানরটি।
এই পরিবর্তনে লেখার ভাষা এবং ভাব আরও সহজ ও সাবলীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো অংশ অস্পষ্ট মনে হলে জানাতে পারেন।